১৮৯০ সনের ১ এপ্রিল এক শুভ লগ্নে বাজিতপুর ইংলিশ মিডল স্কুল নামে উক্ত প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠিত হয়। তৎকালীন সময়ে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন এ মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ছিল এলাকাবাসীর (আশেপাশের কয়েকটি মহকুমার) জন্য এক বিরাট পাওয়া। মূলতঃ সেই সময় থেকেই এই এলাকার মানুষের উচ্চ শিক্ষার দ্বার উন্মোচন হয়। ১৯৬১ সনে এসে বিদ্যালয়টির নামকরণ করা হয় ‘বাজিতপুর হাই স্কুল’। অতঃপর ১৯৮২ সনে তৎকালীন সরকার এই প্রতিষ্ঠানের ফলাফল ও অন্যান্য বিষয় বিবেচনা করে পাইলট স্কিমে অন্তর্ভূক্ত করেন। এরপর থেকে উক্ত প্রতিষ্ঠানের নাম হয় ‘বাজিতপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়’। বাজিতপুরের বিশিষ্ট শিল্পপতি, সমাজসেবক ও দানবীর মরহুম জনাব আলহাজ্ব জহুরুল ইসলাম সাহেব ১৯৯১ সনে বাজিতপুরকে একটি শিক্ষানগরী হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে ‘জহুরুল ইসলাম এডুকেশন কমপ্লেক্স’ গঠন করেন। তিনি তাঁর পিতামহ মরহুম ‘হাফেজ আব্দুর রাজ্জাক’ সাহেবের নামে এই প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করে এডুকেশন কমপ্লেক্সের অন্তভূর্ক্ত করেন। তখন থেকে এ বিদ্যালয়ের নাম ‘বাজিতপুর হাফেজ আঃ রাজ্জাক পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়’। উক্ত বিদ্যালয়টি ১৯৬৪ সনে স্থায়ীভাবে স্বীকৃতি লাভ করে। যার স্মারক নং— চওজ—১/গণগ—৮০৯৯, তারিখ— ১২.০৩.১৯৬৪।
১৯৬১ সনে বিজ্ঞান শাখা খোলা হয়, যার স্মারক নং— ৫১৫৯ তারিখ— ১৪.১০.১৯৬১ এবং ১৯৬৮ সনে ব্যবসা শাখা খোলা হয়, যার স্মারক নং— চওজ—২১/গণগ—৩৬২৮ তারিখ— ১৩.০২.১৯৬৮। ২০০৫ সনে বিদ্যালয়ে আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি শিক্ষা প্রসারের লক্ষ্যে কম্পিউটার শাখা খোলা হয়, যার স্মারক নং— ৫৬/কিশ/৩৩৭৪ তারিখ— ০৬.০৭.২০০৫। ১৯৯৮ সনে কারিগরি বিষয়ে জ্ঞান প্রসারের জন্য এস.এস.সি ভোকেশনাল (তিনটি ট্রেড) বিল্ডিং মেইনটেনেন্স, জেনারেল মেকানিক্স ও জেনারেল ইলেকট্রিক্যাল ওয়ার্কস শাখা খোলা হয়। ২০১১ সনে বিদ্যালয়টি সরকারের মডেল প্রকল্পের আওতাভুক্ত হয়ে নামকরণ হয় বাজিতপুর হাফেজ আঃ রাজ্জাক পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়।
অবস্থান : বাজিতপুর পৌরসভা হতে ২০০ গজ পশ্চিম দিকে এবং উপজেলা পরিষদ হতে ৩০০ গজ পূর্বে অর্থাৎ বাজিতপুরের প্রাণ কেন্দ্রে এক মনোরম পরিবেশে বিদ্যালয়টি অবস্থিত। বিদ্যালয়টি দক্ষিণমুখী। এর উত্তর পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ঘোড়াউত্রা নদীর সহিত সংযোগকারী খাল।
একাডেমিক ভবন : অত্র বিদ্যালয়ের প্রধান ভবনটি দ্বিতল বিশিষ্ট, যার ১৬টি কক্ষ রয়েছে। তাছাড়া আরও ৫টি ভবন আছে, যার ১৩টি কক্ষ রয়েছে। বিদ্যালয়ে ১২ কক্ষ বিশিষ্ট একটি ছাত্রাবাস রয়েছে। আরও ৩টি কক্ষ নির্মাণাধীন। হাতে কলমে কারিগরি শিক্ষা প্রদানের জন্য তিনটি ট্রেডের ৩ কক্ষ বিশিষ্ট একটি ওয়ার্কসপও রয়েছে। বিদ্যালয়ে একটি আধুনিক কম্পিউটার ল্যাব রয়েছে। সেখানে ২০টি কম্পিউটার রয়েছে। মডেল প্রকল্পের আওতায় দ্বিতল ৬ কক্ষ বিশিষ্ট একটি একাডেমিক ভবন রয়েছে। ৬টি কক্ষেই মাল্টিমিডিয়া ক্লাশ চালু রয়েছে।
আবাসিক ভবন : বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের একটি আধুনিক আবাসিক ভবন সহ মোট দুইটি আবাসিক ভবন রয়েছে।
স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি : বিদ্যালয় ক্যাম্পাস সহ মোট ২ একর ১৯ শতাংশ ভূমি রয়েছে। বিদ্যালয়ের চার দিকে সীমানা প্রাচীর আছে। ছাত্রদের পানীয় জলের জন্য তিনটি টিউবওয়েল ও ওয়াসার পানির সুব্যবস্থা আছে।
ছাত্র সংখ্যা : বর্তমানে বিদ্যালয়ে ১৯৩০ জন ছাত্র রয়েছে। প্রতি বছর বিদ্যালয় হতে এস.এস.সি ও জে.এস.সি পরীক্ষায় জিপিএ—৫ সহ অনেক ছাত্র সফলতার সহিত উত্তীর্ণ হয়। ১৯৬৮ সনে জনাব মাহবুবুর রহমান (মেনু মিয়া) ও ১৯৮২ সনে বাণিজ্য শাখায় জনাব হায়দার আলী খান অত্র বিদ্যালয় হতে এস.এস.সি পরীক্ষায় ঢাকা বোর্ডের প্রথম স্থান অধিকার এবং কৃষি বিভাগে ঢাকা বোর্ডে চতুর্থ স্থান অধিকার করেন জনাব এ.কে.এম নুরুল কবির। অত্র বিদ্যালয় হতে শিক্ষা গ্রহণ করে অনেকে দেশের বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করছেন বা করেছেন। তন্মধ্যে মরহুম শিল্পপতি জনাব আফতাব উদ্দিন, দানবীর মরহুম জনাব আলহাজ্ব জহুরুল ইসলাম, সাবেক কৃষিমন্ত্রী মরহুম জনাব হামিদ উদ্দিন, বাজিতপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র জনাব আলহাজ্ব মিজবাহ উদ্দিন আহমেদ, অবসরপ্রাপ্ত বিগ্রেডিয়ার জনাব ইউসুফ হায়দার, অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল জনাব জিয়া উদ্দিন, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিষ্টার জনাব কে.এস নবী, সাবেক এম.পি জনাব মঞ্জুর আহমেদ, সাবেক এম.পি জনাব আমির উদ্দিন আহাম্মদ, সাবেক এম.পি জনাব মজিবুর রহমান মঞ্জু, সাবেক এম.পি জনাব খন্দকার মফিজুর রহমান রোকন, সাবেক জেলা জজ জনাব হাসান ইমাম, হাইকোর্টের সাবেক রেজিষ্ট্রার জনাব এ.কে.এম শামছুল ইসলাম আজম, জেলা জজ জনাব নূরুজ্জামান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের বর্তমান অধ্যাপক ডঃ কামরুল হাসান মামুন, প্রভাষক ডঃ জনাব মোহাম্মদ বদরুল হাসান (রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ), জনাব মোঃ আমিনুল হক ভূঁঞা, সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট, ডঃ মাহমুদুর রহমান, প্রভাষক, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট, জনাব আঃ ওয়াহাব, সাবেক সচিব, বাবু রবীন্দ্রনাথ চৌধুরী, সাবেক অধ্যক্ষ, সরকারি মহিলা কলেজ, কিশোরগঞ্জ, প্রকৌশলী জনাব মোঃ সাহের উল্লাহ, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, জনতা ব্যাংক, প্রধান কার্যালয়, মতিঝিল, ঢাকা, জনাব সারয়োর মুর্শিদ শামীম (পুলিশ সুপার), ডাঃ এস.এ খান নোমান, ডাঃ কামরুজ্জামান, ডাঃ মইনুল হাসান টিটু, ডাঃ বিধান বণিক, ডাঃ হরেকৃষ্ণ দেবনাথ, ডাঃ গোলাম কিবরিয়া, ডাঃ রিপন চন্দ্র দেবনাথ, লেঃ কর্ণেল ডাঃ আপেল মাহমুদ, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জনাব অধ্যাপক ইয়াকুব মিয়া, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এডভোকেট জনাব শেখ নূরুন্নবী বাদল, বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান জনাব ছারওয়ার আলম, বর্তমান মেয়র জনাব মোঃ আনোয়ার হোসেন আশরাফসহ আরও অনেক প্রাক্তন ছাত্র। অত্র বিদ্যালয়ের সাবেক ও সফল নাম করা প্রধান শিক্ষকদের মধ্যে বাবু আদিত্য চন্দ্র রায়, জনাব মোহাম্মদ হোসেন, জনাব আঃ সোবাহান, ও জনাব মোঃ মফিজুল ইসলাম আফ্রাদ সাহেবের নাম উল্লেখ যোগ্য।
ক্রীড়াঙ্গণ : জাতীয় পর্যায়ে সাতাঁর প্রতিযোগিতায় স্বর্ণ পদক প্রাপ্ত সর্বানন্দ দাস, জাতীয় পর্যায়ে বর্শা নিক্ষেপে রৌপ্য পদক প্রাপ্ত রিফায়েত উল্লাহ ও ১০০ মিটার দৌড়ে রৌপ্য পদক প্রাপ্ত নিজাম উদ্দিন অত্র বিদ্যালয়ের কৃতি ছাত্র বটে। জাতীয় স্কুল মাদ্রাসা গ্রীষ্মকালীন প্রতিয়োগিতা ২০১৭, জেলা পর্যায়ের কাবাডি খেলায় রানার আপ হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছে।
শিক্ষক—কর্মচারী : অত্র বিদ্যালয়ে ২৮ (আঠাশ) জন অভিজ্ঞ এম.পি.ও ভুক্ত শিক্ষক ও ১৩ (তের) জন অভিজ্ঞ খন্ডকালীন শিক্ষক এবং ১৩ (তের) জন কর্মচারী রয়েছে।
প্রধান শিক্ষক
বাজিতপুর হাফেজ আঃ রাজ্জাক পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়।